ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইউএসএ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

নির্বাচনী ভীতি সৃষ্টি করছে ট্রাম্প ক্যাম্পেইন

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৬
নির্বাচনী ভীতি সৃষ্টি করছে ট্রাম্প ক্যাম্পেইন

নিউইয়র্ক থেকে: নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে ভয় বাড়ছে। ভোটের আর মোটে পাঁচদিন বাকি।

ঠিক এমন সময় সত্যিই ভয় পাওয়ার মতো কিছু ঘটনা ঘটছে। যার একটা সুদূরপ্রসারি প্রভাব আমেরিকার ভবিষ্যৎরাজনীতিতে পড়বে।  

যে আমেরিকাকে গণতন্ত্রের শিক্ষালয় বলা হতো সেই আমেরিকাতেই এখন এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে, কিংবা ঘটে যাচ্ছে যা বিশ্বের খারাপ গণতন্ত্রের উদাহরণ এমন দেশগুলোতেও ঘটেনি।  

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই তার মত দিচ্ছিলেন অধ্যাপক নূরুল আমিন। আড়াই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এই বাংলাদেশি আমেরিকান জাতিসংঘের একজন স্থায়ী পর্যবেক্ষক এবং ডিস্ট্রিক্ট কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজাঙ্কট প্রফেসর।  

কিন্তু নূরুল আমিনের কথায়ই কেবল নয় যুক্তরাষ্ট্রের বাঘা বাঘা রাজনৈতিক বিশ্লষকরা এখন এভাবেই বলছেন। ওয়াশিংটন পোস্টের পল ওয়াল্ডম্যান তার একটি লেখায় বলেছেন, নির্বাচনকে ঘিরে যে শঙ্কার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে অদূর ভবিষ্যতের আমেরিকা তার জন্য ভুগবে। ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আজ যে রিপাবলিকান দল তার নেতা-কর্মীরা আজ আমেরিকার গণতন্ত্রকে আঘাত করে চলেছেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে তাদের টার্গেট স্রেফ হিলারি ক্লিনটন, কিন্তু বস্তুত তাদের সকল কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমেরিকা ও এর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।  

ক্যাম্পেইন মওসুমে এবার যা কিছু দেখা যাচ্ছে তা অতীতে আর কখনোই দেখা যায়নি। আর তা কারও জন্যই সুখকর কিছু নয়। এ বছরের নির্বাচনটি আমেরিকার এমন এক চেহারা সবার সামনে নিয়ে এলো যা কারও কাম্য নয়, আর ধারণারও অতীত, এভাবেই বলছিলেন নূরুল আমিন।  

সাম্প্রতিক কিছু বিষয় তুলে ধরে পল ওয়াল্ডম্যান লিখেছেন, এফবিআই যে ঘটনাটি ঘটালো, তাতে নিউইয়র্কের কতিপয় এজেন্ট জড়িত এবং তা হিলারির জনপ্রিয়তায় ধস নামানোরা উদ্দেশেই করা হয়েছে। ক্যাম্পেইনের শেষ ভাগে এসে এমন একটি কাজ স্রেফ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আর তা রিপাবলিকানদের উষ্কানিতেই ঘটেছে। এখানে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমেকে তারা নির্বাচনের ক্যাম্পেইন টুল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আর তাদের এই তদন্তের ভিত্তি ছিলো হিলারি-বিরোধী একটি বই। যা আবার লেখা হয়েছে একটি বিশেষ সংগঠনের আওতায় যার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হচ্ছেন ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের সিইও। এটা স্পষ্ট যে ট্রাম্পপন্থি এফবিআই এজেন্টরা এখন ট্রাম্পের আশেপাশে ঘুরঘুর করছেন আর তারা হিলারির ক্যাম্পেইনকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবেন সেই ফন্দি আঁটছেন।  

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম হ্যাকড হয়েছে শুনে ফূর্তিতে নাচছে রিপাবলিকানরা। কেবল তাই নয়; প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যক্তিগত ই-মেইলও প্রকাশ করে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি রিপাবলিকান প্রার্থী একটি শত্রু দেশের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন যেনো তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম হ্যাক করা হয়।  

বিষয়গুলো ভোটের আগের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কিন্তু ভোটের পরের কি অবস্থা হবে? 

সে প্রশ্ন অধ্যাপক নূরুল আমিনের মত, ভোটের আগেই ফল পক্ষে না গেলে তা মেনে নেওয়া হবে না, এমন বক্তব্য পৃথিবীর নিকৃষ্টতম গণতন্ত্রেও দেখা যায় না। সেখানে হয়তো অন্য গণতান্ত্রিক দূর্বলতা থাকে কিন্তু এমনটা আমরা আর কখনোই শুনতে পাইনি।  

কেবল তাই নয় দলের উচ্চ পর্যায়ে আসীন রিপাবলিকানরা এখন আরও এক পা বাড়িয়ে বলছেন, হিলারি ক্লিনটন দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই তাকে অভিশংসনের মুখে পড়তে হবে। আর এগুলো যারা বলছেন তারা পেছনের বেঞ্চে বসা অমনোযোগী জ্যাঠা ছেলেদের কেউ নন, তারা খোদ ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা নেতা। যাদের মধ্যে উইসকনসিনর সিনেটর মাইকেল ম্যাককল রয়েছেন। যিনি আবার হাউসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির চেয়ারম্যানও। আরও রয়েছেন প্রবীণ আইন প্রণেতা জেমস সেনসেনব্রেনার, পিটার কিংয়ের মতো নেতারা। আর ট্রাম্পের বড় চ্যালা রুডি জুলিয়ানির মুখেও একই সুর।  

আরেকটি কথা তারা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় কোনও রিপাবলিকান না আসা পর্যন্ত তারা সুপ্রিম কোর্টে ডেমোক্র্যাট কোনও প্রেসিডেন্টের মনোনীত যে কারও নিয়োগ বাতিল করতেই থাকবেন।  

এদিকে আরও অভিযো আসছে রাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ে রিপাবলিকান বলে পরিচিত কর্মীরা আফ্রিকান-আমেরিকানদের ভোটগুলো নষ্ট করতেও কাজ করছেন। আর অনেকেই হিলারিকে ঠেকাতে প্রয়োজনে সংঘাতে জড়াতেও প্রস্তুত।  পল ওয়াল্ডম্যান মনে করছেন ওটাই হতে পারে ট্রাম্পের এই ভোটে বিজয়ের একমাত্র পথ।  
 
বোঝাটা জরুরি যে, পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক নয়। এর সে সহিংসতা সে্রফ খালি হাতে মল্লযুদ্ধই হয়, হতে চলেছে খুবই অস্বাভাবিক কিছু একটা।

বাংলাদেশ সময় ০৬৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
এমএমকে 

আরও পড়ুন
** জয়ের পথেই হাঁটছেন হিলারি, বললেন আজিজ আহমদ
** রশিদ মালিক হবে একটি পরিবর্তনের নাম, প্রত্যাশা নিউইয়র্কে

** কংগ্রেসম্যান প্রার্থী রশিদ মালিকের জন্য তহবিল সংগ্রহ নিউইয়র্কে
** সব সম্পাদক এক মঞ্চে, হিলারির পক্ষে অনন্য বাংলাদেশি আয়োজন
**ভূত নেমেছে শহরে! বয়েছে ক্যান্ডির ঝড়
** কোমে বোমায়ও হিলারি অটল, অপ্রতিরোধ্য

** শ্বেতভবনের বাসিন্দা কে হবেন? কে যোগ্য!
** হুমাকে নিয়ে সংকটে হিলারি!
** হিলারিকে ভোট দিতে প্রস্তুত ওয়াশিংটনের বাংলাদেশি কমিউনিটি
** নির্বাচনী জরিপের চড়াই-উতরাই, কনফিউজড অনেকেই​
** নির্বাচনী সহিংসতার শঙ্কা প্রকট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে

** আর্লি ভোটে আর্লি তুষারপাত, মূল ভোটে কি হবে!
** মুসলিম ডেমোক্র্যাটরা সক্রিয়, রয়েছেন বাংলাদেশিরাও
** বোস্টনে ভোট ক্যাম্পেইনের এক উপভোগ্য সন্ধ্যা
** বোস্টনে মিললো ভোটের বিলবোর্ড
** হিলারির জন্য প্রচারে আমেরিকান মুসলিমদের র‌্যালি রোববার
** জ্যাকসন হাইটসের আড্ডায় ট্রাম্প আতঙ্ক​
** বহু জাতির দেশে বহুমুখী ভোট, বহু তার সমীকরণ
** আবহাওয়া ঠাণ্ডা, ভোটের হাওয়া কী গরম!​
** অদ্ভুত এক নির্বাচনের দেশে!
**
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাভার করতে বাংলানিউজ’র মেনন যুক্তরাষ্ট্রে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।